চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার মান্যবর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী।
উপজেলার কালাবিবি দিঘির মোড়ে ডায়মন্ড পার্কে অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং ভোটারদের প্রার্থীকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।
আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামীর সম্ভাবনা।এবারের আসন্ন নির্বাচনে আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাবনা কতটুকু তা সময় বলে দেবে তবে বিগত নির্বাচনগুলোর চাইতে এবারের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতের ভোটের হিসাব উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন ঘটতে পারে। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হাসিনা সরকারের ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়। দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনেককে হত্যা করা হয় এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে খুন, গুম ও কারাগারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভুমিকা সারাদেশে প্রশংসা কুঁড়িয়েছে এবং জামায়াতের প্রতি তরুণ প্রজন্মের যে একটি স্টিগমাটাইজ ধারণা ছিল সেটার অনেকাংশে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াতের প্রতি সমবেদনা ও সমর্থন এবং আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের ছাত্রজনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকারের পতন এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ
১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করায় জামায়াতের ভোটের পরিমাণে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করেছে।
বিএনপির অবস্থানঃ
আনোয়ারা বিএনপিতে স্পষ্টত বিবাদমান দুইটি ধারা পরিলক্ষিত করা যায়। সম্প্রতি আনোয়ারায় অনুষ্ঠিত হওয়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সমাবেশে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা সরোয়ার জামাল নিজামকে সমাবেশে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। যদিও নির্বাচনের আগে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে কিন্তু
অপরদিকে, প্রধান বড় দল বিএনপি জুলাই আন্দোলনের পর থেকে সারাদেশে এবং আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতেও যানবাহন স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলসহ গণবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের প্রতি তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী ভাল করতে পারে।
জামায়াত প্রার্থীর প্রোফাইলঃ
অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আনোয়ারা উপজেলা শাখার আমীর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষানুরাগী ও ধর্মীয় বক্তা হিসেবে তাঁর জনসমর্থন রয়েছে।
চ্যালেঞ্জঃ
যদিও জামায়াতে ইসলামীর জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তবুও দলটিকে এখনও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ আসনে জামায়াতের সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো।
হাসিনা সরকারের সময়ে দলটির উপর চলা দমন-পীড়ন ও অপপ্রচারের প্রভাব এখনও বিদ্যমান। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য জামায়াতকে একটি শক্তিশালী প্রচারণা চালাতে হবে।
আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে তাঁদের প্রচারণা কৌশল এবং তরুণ ও পুরাতন ভোটারদের সমর্থন আদায়ের উপর।