কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন ফুলছড়ি রেঞ্জের তিন বিটের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের বাগান সৃজন ও নার্সারিতে চারা উত্তোলনের উপকরণ সরঞ্জাম ক্রয়ে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
বিট কর্মকর্তাদের দেওয়া সূত্র মতে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সুফল প্রকল্পের নার্সারী ও বাগান সৃজনের উপকরণ সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য ই-টেন্ডারের মাধ্যমে আনুমানিক দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই বরাদ্দে ফুলছড়ি বিটে ১৭০ হেক্টর, রাজঘাট বিটে ১০ হেক্টর এবং খুটাখালী বিটে ৭০ হেক্টর সুফল প্রকল্পে আনুমানিক ৭ লক্ষ বৃক্ষরোপন করার কথা উল্লেখ্য থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায় আনুমানিক ২ থেকে আড়াই লক্ষ বৃক্ষরোপন করা হয়েছে।
জানা যায়, বরাদ্দের ওই টাকায় ঠিকাদার কর্তৃক ফুলছড়ি রেঞ্জে নার্সারী ও বাগান সৃজনের জন্য রোপন সরঞ্জাম, বীজ, বাশেরনশীল গোবর, অস্থায়ী শেড সামগ্রী, বাঁশ, রাসায়নিক সার, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রের জন্য কীটনাশক, দোআঁশ মাটি, সুতলি, পলি ব্যাগ, হালকা ইস্পাতের তার, বাশের চাটাই, চারা বৃদ্ধির জন্য সানগ্রাস, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাসায়নিক সার ও আরসিসি সাইন বোর্ডের জন্য উপকরন সামগ্রী সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।
যদিও বনবিভাগের কয়ক কর্মকর্তা জানিয়েছেন তার উল্টো। নার্সারী উত্তোলন ও বৃক্ষরোপন সরঞ্জামের হিসেব শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রেখেছেন ঠিকাদার ও রেঞ্জ কর্মকর্তা। নাম মাত্র কিছু রাসায়নিক সার, পলি ব্যাগ, সুতলি, খুটি, গোবর সরবরাহ করেছেন ঠিকাদার। বাকী মালামাল সরবরাহ না করে বরাদ্দের বেশিরভাগ টাকা ঠিকাদার ও রেঞ্জ কর্মকর্তা মিলে ভাগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেছেন, একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করায় রেঞ্জ কর্মকর্তা হুমায়ুন আহমেদ ছোট ভাই কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বড় ভাই হিসেবে পরিচয় হয়। সে সুবাদে হুমায়ুন আহমেদ ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি’র অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও তার অপরাধের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হয়নি।
সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বরাদ্দে টাকায় কত হেক্টর বাগান করা হয়েছে এবং কোন কোন ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করেছে জানতে চাইলে কোন তথ্য দেননি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা হুমায়ুন আহমেদ।
সরেজমিনেও দেখা গেছে একই চিত্র। বনবিভাগ যেসব বাগান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার হিসেব শুধু কাগজে-কলমে ও সাইনবোর্ডে সীমাবদ্ধ। সাইনবোর্ডে বাগানের চারার সংখ্যা ও গাছের প্রজাতির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার কোন মিল পাওয়া যায়নি। আবার কোন জায়গায় বাগানের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যে চারা গুলো লাগানো হয়েছে অনেক গাছের চারা প্রথম বছরেই মারা গেছে ।
এসব বিষয় জানতে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন পরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করার পরামর্শ দেন।